সর্বশেষ

Thursday, June 8, 2023

ভালোবাসি

ভালোবাসি

ভালোবাসি 
-জহির সাদিক

ভুল করে হোক, আর না বুঝে হোক
মাঝেমাঝে বোলো ভালোবাসি
ইচ্ছেই হোক, আর অনিচ্ছেই হোক
বেলায় হোক, আর অবেলায় হোক 
বোলো ভালোবাসি 
এমনকি খুনসুটি করে হলেও বোলো ভালোবাসি।। 
মাঝেমাঝে লোডশেডিং হোক
ঝুপ্ করে সন্ধ্যা নামুক 
পুরো শহর জুড়ে আঁধার নেমে আসুক 
কোন সমস্যা নেই 
জোনাকির মায়াবী আলোয় তোমাকে খুঁজবো
হাত বাড়িয়ে তোমাকে ছুঁবো
তুমি শুধু সাহস করে বোলো ভালোবাসি।। 
চাঁদনি রাতে কনকনে শীতের আমেজে 
খোলা আকাশের নীচে  
জবুথবু বেশে বোলো ভালোবাসি 
তারপর একটুখানি উষ্ণতার খোঁজে 
একটুখানি ওম নিতে 
হুট করে জড়িয়ে ধরে বোলো ভালোবাসি।। 
তুচ্ছ ব্যাপারে আমাদের হবে কথা কাটাকাটি 
মতের অমিল হলে একটুখানি আড়ি 
মাঝেমধ্যে চলে যাবে বাপের বাড়ি 
তখন অভিমান করে হলেও বোলো ভালোবাসি 
আর মাঘের হাড়কাঁপানো শীতে 
শেষ রাত্রিতে হঠাৎ লেপ ধরে টানাটানি
তাতে কোন সমস্যা নেই
তোমার জন্য পুরোটা লেপ ছাড়তে রাজি
বিনিময়ে তুমি শুধু বোলো ভালোবাসি।। 
ভালোবাসা হলো স্বপ্নের মতো 
কাছে না থাকলেও 
সারাটা জীবন কাছে থাকার প্রতিশ্রুতি 
আর এজন্যই
তুমি শুধু মাঝেমাঝে বোলো ভালোবাসি ভালোবাসি।। 

Sunday, June 4, 2023

নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও (সহিদীয়া সঙ্গীত_১১)

নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও (সহিদীয়া সঙ্গীত_১১)




যেদিন রজনী হবে অপূর্ব দীপ্তিমিান্
,

সেদিন নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও তোমার প্রিয়জন
প্রিয়জনের প্রিয়মুখ দেখিবার লাগি,
ছুটিও তার কাছে সকল ত্যাগী
তার অনুষঙ্গে জীবন করো অম্লান,
যেদিন রজনী হবে অপূর্ব দীপ্তিমিান্ ,
সেদিন নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও তোমার প্রিয়জন


যেদিন অধিক দীপ্তি পাবে তারা ভরা আকাশ,
সেদিন নিয়ন্তাকে সত্তহীনে করিও তালাশ।
তালাসে যদি পাও তাহার দিদার,
চির অমর হবে জীবন তোমার।
দিদারের পর হয় যেন জিবনবসান,
যেদিন রজনী হবে অপূর্ব দীপ্তিমিান্ ,
সেদিন নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও তোমার প্রিয়জন।

যেদিন রজনী না হবে গরম- না হবে শীতল,
সে রাতে সখাকে খুঁজিও অবিরল।
অপেক্ষায় থেকো বসে সাজিয়ে আসর,
উজ্জ্বল হবে যখন ফুলের বাসর।
মনের হরষে গাইও মিলনের গান,
যেদিন রজনী হবে অপূর্ব দীপ্তিমিান্ ,
সেদিন নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও তোমার প্রিয়জন।

প্রিয়াকে পাবার আশে, দিবসে উপবাসী,
পুছিও তাকে তুমি, যেদিন বিজোড় নিশি।
আরাধনায় মিষ্টতা মিলবে যবে,
বুঝে নিয়ো প্রিয়া তোমার এসেছিলে তবে।
তাঁহার উদ্ভাসে জীবন হবে মহীয়ান,
যেদিন রজনী হবে অপূর্ব দীপ্তিমিান্ ,
সেদিন নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও তোমার প্রিয়জন।

নিবিষ্টতায় যেদিন পাবে সুখের প্রখর দ্যুতি,
সেদিন তোর আসরে আসতে পারে পতি।
পতি বিনে নাইরে গতি, নাইরে কোন উপায়,
শক্তি থাকতে কর ভক্তি পতির সুপ্ত পায়।
পতি যদি থাকে তৃপ্ত, সার্থক দু’জাহান,
যেদিন রজনী হবে অপূর্ব দীপ্তিমিান্ ,
সেদিন নিমিষহারা নয়নে খুঁজিও তোমার প্রিয়জন।

মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
Sahidul77@gmail.com
চিল্কায় সকাল

চিল্কায় সকাল

চিল্কায় সকাল 

-বুদ্ধদেব বসু

আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায়
কেমন করে বলি?
কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর,
যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান
দিগন্ত থেকে দিগন্তে;
কী ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে;
চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে,
মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে।
তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে,
স্টেশনে গাড়ি এসে দাড়িয়েঁছে, তা-ই দেখতে।
গাড়ি চ’লে গেল!- কী ভালো তোমাকে বাসি,
কেমন করে বলি?
আকাশে সূর্যের বন্যা, তাকানো যায়না।
গোরুগুলো একমনে ঘাস ছিঁড়ছে, কী শান্ত!
-তুমি কি কখনো ভেবেছিলে এই হ্রদের ধারে এসে আমরা পাবো
যা এতদিন পাইনি?
রূপোলি জল শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখছে; সমস্ত আকাশ
নীলের স্রোতে ঝরে পড়ছে তার বুকেরউপর
সূর্যের চুম্বনে।-এখানে জ্ব’লে উঠবে অপরূপ ইন্দ্রধণু
তোমার আর আমার রক্তের সমুদ্রকে ঘিরে
কখনো কি ভেবেছিলে?
কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম
দুটো প্রজাপতি কতদূর থেকে উড়ে আসছে
জলের উপর দিয়ে।- কী দুঃসাহস! তুমি হেসেছিলে আর আমার
কী ভালো লেগেছিল।
তোমার সেই উজ্জ্বল অপরূপ মুখ। দ্যাখো, দ্যাখো,
কেমন নীল এই আকাশ-আর তোমার চোখে
কাঁপছে কত আকাশ, কত মৃত্যু, কত নতুন জন্ম
কেমন করে বলি।

Wednesday, July 27, 2022

ভালোবাসা নেই

ভালোবাসা নেই


ভালোবাসা নেই
- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী


বার ইতি টানা হোক দূষিত ভালবাসায়।

যেখানে তোমার কোন হৃদয় নেই,

সে ভালোবাসা কি পবিত্র?


সে ভালোবাসা কি জ্যোৎস্নার আলোর মতো ফুটফুটে

নাকি ভোরে ফোটা তাজা ফুলের মত নির্মল?

সে ভালোবাসা কি কাঁদতে জানে 

নাকি অপেক্ষা করতে জানে ঘন্টার পর ঘন্টা?


সে ভালোবাসা কি নিঝুম রাতের মতো 

নিস্তব্ধ মায়াময় 

নাকি শেষ বিকেলের মরা রোদের মতো 

আকুল ক্রন্দনময়?             


সে ভালোবাসা কি মেঘেদের মিলনের মত

নাকি জন্ম দিতে পারে মোহনার মত সঙ্গমস্থল?         

তবে রেখে লাভ কি এমন ভালোবাসা?

রক্ত ঝরিয়ে দিই ধূলায় পড়ে থাকা গোলাপে।


No Love

May the bar be drawn with malicious love.

where you have no heart,

That love is sacred?


Is that love as bright as the light of an astrologer?

Or as pure as a fresh flower in the morning?

Does love know how to cry?

Or wait for hours?


Is that love like a quiet night?

Quietly magical

Or like the dead sun of late afternoon

Crying yearning?


Is that love like the meeting of the clouds?

Or can give birth to a confluence like an estuary?

But what is the benefit of keeping such love?

I shed blood on the rose lying in the dust.

Tuesday, July 26, 2022

যদি না ভালবাসতে পারো তবে চলে যাও

যদি না ভালবাসতে পারো তবে চলে যাও


যদি না ভালবাসতে পারো তবে চলে যাও
- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী


যদি না ভালবাসতে পারো তবে চলে যাও,

বাঁধা দেব না।

 

তবে যাবার আগে-

আমায় একুশ বছরে নামিয়ে দাও,

আমার যৌবন ফিরিয়ে দাও,

রাতের তারাভরা আকাশ ফিরিয়ে দাও,

নির্জন দুপুর ফিরিয়ে দাও,

ভোরের নির্মল বাতাস ফিরিয়ে দাও।

 

শুধু তোমার কথা ভেবে ভেবে 

ভাবা হয়নি নিজের জীবনকে নিয়ে,

এত সুন্দর বিশ্ব প্রকৃতির রূপকে অবহেলা করেছিলাম।

তোমার জন্য রেখেছিলাম গোটা হৃদয়টা

সেখানে অন্য কিছুকে ঠাঁই দিইনি,

কিন্তু, তুমি রেখেছিলে আমায় দূরে সরিয়ে।

 

তাই বলছি-

যদি না ভালবাসতে পারো তবে চলে যাও,

কিন্তু, শেষবারের মতো আমার বুক চিরে নিজের নামটা দেখে, মুখ ফেরাও।

Monday, July 25, 2022

মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম

মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম

During Mr. Sahidul's Book launch in Singapore, Mr. Mohammad Sahidul Islam is on the right side with the Honorable High Commissioner of Bangladesh.

আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের বন্ধু, সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোরা গিরিশ ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম। উৎসবকে সফল করতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বন্ধু সহিদুল । তোমাকে পেয়ে আমরা ধন্য।



অসম্পূর্ণ ইচ্ছে

অসম্পূর্ণ ইচ্ছে

অসম্পূর্ণ ইচ্ছে
- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী

ইচ্ছে করছে তোকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা চুমু খাই,

তোর চুলগুলো আমার কাঁধে এসে পড়ুক।

ইচ্ছে করছে তোকে কোলে নিয়ে ঘাড়ে একটা চুমু দিই,

তোর মনে যৌনতার স্বাদ জাগিয়ে তুলি।

ইচ্ছে করছে একসাথে মেলায় গিয়ে ফুচকা পাঁপড়ি চাট খাই,

খুশিতে প্রেমের গল্প করি।

ইচ্ছে করছে তোকে একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ভূতের ভয় দেখাই,

তুই নাকি একদম ভয় পাস না।

ইচ্ছে করছে একসাথে চলতে চলতে হঠাৎই-

পিছন থেকে তোর চুল ধরে হালকা টানি,

তুই রেগে আমার বুকে মার এক ঘুষি।

ইচ্ছে করছে ভিড় বাসে উঠে বসার জায়গা না পেয়ে-

তুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে হেলান দিয়ে থাক।

তোর ঘামে একাকার হয়ে যাই,

তোর চুলের গন্ধে প্রেমের জীবনটা উপভোগ করি।

ইচ্ছে করছে তোকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাই,

মনের মতো ক’টা দিন কাটাই‌।

ইচ্ছে করছে কোন এক কালী মন্দিরে গিয়ে

তোর আর আমার বিয়েটা সেরে ফেলি।

তুই আমি কত ঝগড়া করেছি,

বিয়ের পর আমাদের রাজা হবে না রানি হবে এই নিয়ে….।

তোকে শুধু দেখে গেলাম স্বপ্নেতে-

আমার ইচ্ছেগুলো অসম্পূর্ণ থেকে গেল রে।

(চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল)

আমি যে শুয়ে আছি হাসপাতালের বেডে,

পাশেই দেখতে পাচ্ছি কম্পিউটার স্ক্রিনে আমার হার্টবিট-

তার ওঠানামা ক্রমশ কমে আসছে, কমে আসছে।

— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী

Friday, April 7, 2017

স্তব্ধ-রাতে

স্তব্ধ-রাতে



স্তব্ধ-রাতে
 কাজী নজরুল ইসলাম
Kazi Nazrul Islam

থেমে আসে রজনির গীত-কোলাহল,
ওরে মোর সাথি আঁখি-জল,
এইবার তুই নেমে আয় –
অতন্দ্র এ নয়ন-পাতায়।
  
আকাশে শিশির ঝরে, বনে ঝরে ফুল,
রূপের পালঙ্ক বেয়ে ঝরে এলোচুল ;
কোন গ্রহে কে জড়ায়ে ধরিছে প্রিয়ায়,
উল্কার মানিক ছিঁড়ে ঝরে পড়ে যায়।
আঁখি-জল, তুই নেমে আয় –
বুক ছেড়ে নয়ন-পাতায়!…
  
ওরে সুখবাদী
অশ্রুতে পেলিনে যারে, হাসিতে পাবি কি তারে আজি?
আপনারে কতকাল দিবি আর ফাঁকি?
অন্তহীন শূন্যতারে কত আর রাখবি রে কুয়াশায় ঢাকি?
ভিখারি সাজিলি যদি, কেন তবে দ্বারে
এসে ফিরে যাস নিতি অন্ধকারে?
পথ হতে আন-পথে কেঁদে যাস লয়ে ভিক্ষা-ঝুলি,
প্রাসাদ যাচিস যার তারেই রহিলি শুধু ভুলি?
সকলে জানিবে তোর ব্যথা,
শুধু সে-ই জানিবে না কাঁটা-ভরা ক্ষত তোর কোথা?
     ওরে ভীরু, ওরে অভিমানী!
যাহারে সকল দিবি, তারে তুই দিলি শুধু বাণী?
সুরের সুরায় মেতে কতটুকু কমিল রে মর্মদাহ তোর?
গানের গহিনে ডুবে কতদিন লুকাইবি এই আঁখি-লোর?
কেবলই গাঁথিলি মালা, কার তরে কেহ নাহি জানে!
  অকূলে ভাসায়ে দিস, ভেসে যায় মালা শূন্য-পানে।
  
সে-ই শুধু জানিল না, যার তরে এত মালা-গাঁথা,
জলে-ভরা আঁখি তোর, ঘুমে-ভরা আঁখি-পাতা।
কে জানে কাটিবে কিনা আজিকার অন্ধ এ নিশীথ,
হয়তো হবে না গাওয়া কাল তোর আধ-গাওয়া গীত,
হয়তো হবে না বলা, বাণীর বুদ‍্‍বুদে যাহা ফোটে নিশিদিন!
সময় ফুরায়ে যায় – ঘনায়ে আসিল সন্ধ্যা কুহেলি-মলিন!
সময় ফুরায়ে যায়, চলো এবে, বলি আঁখি তুলি –
ওগো প্রিয়, আমি যাই, এই লহো মোর ভিক্ষা-ঝুলি!
ফিরেছি সকল দ্বারে, শুধু তব ঠাঁই
ভিক্ষা-পাত্র লয়ে করে কভু আসি নাই।
  
ভরেছে ভিক্ষার ঝুলি মানিকে মণিতে,
ভরে নাই চিত্ত মোর! তাই শূন্য-চিতে
এসেছি বিবাগি আজি, ওগো রাজা-রানি,
চাহিতে আসিনি কিছু! সংকোচে অঞ্চল মুখে দিয়ো নাকো টানি।

জানাতে এসেছি শধু– অন্তর-আসনে
সব ঠাঁই ছেড়ে দিয়ে – যাহারে গোপনে
চলে গেছি বন-পথে একদা একাকী,
বুক-ভরা কথা লয়ে – জল-ভরা আঁখি।
চাহিনিকো হাত পেতে তারে কোনোদিন,
বিলায়ে দিয়েছি তারে সব, ফিরে পেতে দিইনিকো ঋণ!
  
ওগো উদাসিনী,
তব সাথে নাহি চলে হাটে বিকিকিনি।
কারও প্রেম ঘরে টানে, কেহ অবহেলে
ভিখারি করিয়া দেয় বহুদূরে ঠেলে!
জানিতে আসিনি আমি, নিমেষের ভুলে
কখনও বসেছ কি না সেই নদী-কূলে,
যার ভাটি-টানে –
ভেসে যায় তরি মোর দূর শূন্যপানে।
চাহি না তো কোন কিছু, তবু কেন রয়ে রয়ে ব্যাথা করে বুক,
সুখ ফিরি করে ফিরি, তবু নাহি সহা যায়
আজি আর এ-দুঃখের সুখ।…
  
আপনারে দলিয়া, তোমারে দলিনি কোনোদিন,
আমি যাই, তোমারে আমার ব্যথা দিয়ে গেনু ঋণ।

(চক্রবাক কাব্যগ্রন্থ)

Friday, March 17, 2017

নব ভারতের হলদিঘাট

নব ভারতের হলদিঘাট


নব ভারতের হলদিঘাট
কাজী নজরুল ইসলাম 
Kazi Nazrul Islam

বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
         নব-ভারতের হলদিঘাট,
উদয়-গোধূলি-রঙে রাঙা হয়ে
         উঠেছিল যথা অস্তপাট।
  
আ-নীল গগন-গম্বুজ-ছোঁয়া
         কাঁপিয়া উঠিল নীল অচল,
অস্তরবিরে ঝুঁটি ধরে আনে
         মধ্য গগনে কোন পাগল!
আপন বুকের রক্তঝলকে
         পাংশু রবিরে করে লোহিত,
বিমানে বিমানে বাজে দুন্দুভি,
         থরথর কাঁপে স্বর্গ-ভিত।
দেবকী মাতার বুকের পাথর
         নড়িল কারায় অকস্মাৎ
বিনা মেঘে হল দৈত্যপুরীর
         প্রাসাদে সেদিন বজ্রপাত।
নাচে ভৈরব, শিবানী, প্রমথ
         জুড়িয়া শ্মশান মৃত্যুনাট, –
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
         নব ভারতের হলদিঘাট।

অভিমন্যুর দেখেছিস রণ?
         যদি দেখিসনি, দেখিবি আয়,
আধা-পৃথিবীর রাজার হাজার
         সৈনিকে চারি তরুণ হটায়।
ভাবী ভারতের না-চাহিতে আসা
         নবীন প্রতাপ, নেপোলিয়ন,
ওই ‘যতীন্দ্র’ রণোন্মত্ত –
         শনির সহিত অশনি-রণ।
দুই বাহু আর পশ্চাতে তার
         রুষিছে তিনটি বালক শের,
‘চিত্তপ্রিয়, ‘মনোরঞ্জন,
         ‘নীরেন’ – ত্রিশূল ভৈরবের!
বাঙালির রণ দেখে যা রে তোরা
         রাজপুত, শিখ, মারাঠি, জাঠ!
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
         নব-ভারতের হলদিঘাট।
  
চার হাতিয়ারে – দেখে যা কেমনে
         বধিতে হয় রে চার হাজার,
মহাকাল করে কেমনে নাকাল
         নিতাই গোরার লালবাজার!
অস্ত্রের রণ দেখেছিস তোরা,
         দেখ নিরস্ত্র প্রাণের রণ;
প্রাণ যদি থাকে – কেমনে সাহসী
         করে সহস্র প্রাণ হরণ!

হিংস-বুদ্ধ-মহিমা দেখিবি
         আয় অহিংস-বুদ্ধগণ
হেসে যারা প্রাণ নিতে জানে, প্রাণ
         দিতে পারে তারা হেসে কেমন!
অধীন ভারত করিল প্রথম
         স্বাধীন-ভারত মন্ত্রপাঠ,
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
         নব-ভারতের হলদিঘাট।
  
সে মহিমা হেরি ঝুঁকিয়া পড়েছে
         অসীম আকাশ, স্বর্গদ্বার,
ভারতের পূজা-অঞ্জলি যেন
         দেয় শিরে খাড়া নীল পাহাড়!
গগনচুম্বী গিরিশের হতে
         ইঙ্গিত দিল বীরের দল,
‘মোরা স্বর্গের পাইয়াছি পথ –
         তোরা যাবি যদি, এ পথে চল!
স্বর্গ-সোপানে রাখিনু চিহ্ন
         মোদের বুকের রক্ত-ছাপ,
ওই সে রক্ত-সোপানে আরোহি
         মোছ রে পরাধীনতার পাপ!
তোরা ছুটে আয় অগণিত সেনা,
         খুলে দিনু দুর্গের কবাট!’
বালাশোর – বুড়িবালামের তীর –
         নব-ভারতের হলদিঘাট।

    Wednesday, March 1, 2017

    তুমি যে কাজ করছ আমায়

    তুমি যে কাজ করছ আমায়




    তুমি যে কাজ করছ আমায়
    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
    Rabindranath Tagore

    তুমি যে কাজ করছ, আমায়
    সেই কাজে কি লাগাবে না।
    কাজের দিনে আমায় তুমি
    আপন হাতে জাগাবে না?
    ভালোমন্দ ওঠাপড়ায়
    বিশ্বশালার ভাঙাগড়ায়
    তোমার পাশে দাঁড়িয়ে যেন
    তোমার সাথে হয় গো চেনা।
    ভেবেছিলেম বিজন ছায়ায়
    নাই যেখানে আনাগোনা,
    সন্ধ্যাবেলায় তোমায় আমায়
    সেথায় হবে জানাশোনা।
    অন্ধকারে একা একা
    সে দেখা যে স্বপ্ন দেখা,
    ডাকো তোমার হাটের মাঝে
    চলছে যেথায় বেচাকেনা।

    ৬ আষাঢ়, ১৩১৭
    (গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)